উন্মুক্ত খনি এবং গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের পথ
মে ১৯, ২০১০
anu_mohammad-2
জার্মানীর উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি কী কী কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনীয় নয়
(১) বাংলাদেশের মাটির গঠন, পানির গভীরতা, বৃষ্টি ও বন্যার ধরন সবকিছুই জার্মানী থেকে ভিন্ন এবং তা কোনভাবেই উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির উপযোগী নয়।
(২) বাংলাদেশের জনবসতির ঘনত্ব জার্মানীর তুলনায় এতগুণ বেশি যে তা কোনভাবেই তুলনীয় হতে পারে না। জার্মানীতে যেমন এক অঞ্চলের মানুষদের সরিয়ে অন্যত্র নতুন জনবসতি স্থাপন করা যায় বাংলাদেশে তা কোনভাবেই সম্ভব নয়। জার্মানিতে প্রতিবর্গ কিমি এ জনসংখ্যার ঘনত্ব ২৩২ এবং বাংলাদেশে ১০৬৩।
(৩) বাংলাদেশের নদনদী খালবিল জালের মতো ছড়ানো, এক জায়গায় দূষণ ঘটলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বৃষ্টি ও বন্যায় যার তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে দূষণ তাই বাংলাদেশে অনেকগুণ বেশি ছড়াবে। ভূগর্ভস্থ পানি প্রত্যাহারের যে প্রয়োজন বাংলাদেশে আছে তাতে মরুকরণের যে বিস্তার ঘটবে জার্মানীতে তার সম্ভাবনা কম। মাটির গঠনের কারণে বাংলাদেশে মাটির ধ্বস যেভাবে ঘটে, জার্মানীতে তার সম্ভাবনা নেই। তারপরও জার্মানীতে এই খনির জন্য ২৪৪টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। পানি চিরদিনের জন্য টলটলে দেখালেও বিষাক্ত।
(৪) জার্মানীর যে কোম্পানি এই পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করছে তা জার্মান কোম্পানি। বাংলাদেশে ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্পে সামান্য কিছু রয়্যালটির বিনিময়ে পুরো খনি তুলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল বিদেশি কোম্পানির হাতে।
(৫) জার্মানিতে এরকম উন্মুক্ত খনি স্থাপন করা হয়েছে ৫০ ও ৬০ দশকে। বর্তমান সময়ে আর কোন উন্মুক্ত খনি করা হচ্ছে না, বরং সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
উল্লে*খ্য যে, জার্মানীর এই উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি তারপরও প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়। এর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা দীর্ঘ। জার্মান রাষ্ট্রের অনেক দক্ষ তত্ত্বাবধান ও পরিবেশ দূষণ রোধে ব্যয়বহুল ব্যবস্থা গ্রহণের পরও বিষাক্ত পানি, চাষের অনুপযোগী মাটির তথ্য স্পনসরড নানা রিপোর্টে উল্লে*খ করা না হলেও সেসব তথ্য সুলভ।
দেশে দেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি বাতিল
মাটি-পানি-জীববৈচিত্রসহ সামগ্রিক পরিবেশ এবং জনবসতি জীবনজীবিকার উপর উন্মুক্ত খনন পদ্ধতির যে বিষফল সে সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়ছে। কোন কোন দেশে এই পদ্ধতির বিরুদ্ধে আইন করে তা নিষিদ্ধ হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া সীমান্তে উন্মক্ত কয়লা খনি স্থাপনে বাধা দিয়েছে এই যুক্তিতে যে তা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশের বিশেষত সীমান্তবর্তী লেকের চিরস্থায়ী ক্ষতি করবে। গত দুই বছরের মধ্যে আর্জেন্টিনা ও কোস্টারিকা উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কয়দিন আগে কোস্টারিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই ঘোষণা করেছেন যে, উন্মুক্ত খনির উপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। পেরুতে জনবসতি, পরিবেশ এবং জীবন-জীবিকার উপর ধ্বংসাত্মক ফল বিবেচনা করে উন্মক্ত খনন পদ্ধতিতে সোনা উত্তোলনের কানাডীয় একটি প্রকল্প গণভোটের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। লুটেরা দুর্নীতিবাজ শাসকগোষ্ঠী থাকায় এরপরও দুর্বল দেশগুলোতে বহুজাতিক কোম্পানি উচ্চ মুনাফার সন্ধানে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের নানা কূটচাল চালাচ্ছে। কিন্তু ক্রমে সর্বত্রই সৃষ্টি হচ্ছে জনপ্রতিরোধ।
বাংলাদেশে উন্মুক্ত খনির পক্ষে সরকারী তৎপরতা বন্ধ করতে হবে একথা বিবেচনায় রেখে যে,
১) মাটি, পানি ও মানুষ বিনাশী উন্মুক্ত খনির ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প জনগণ জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করেছেন ২০০৬ সালের ২৬ আগষ্ট। এই প্রতিরোধ এখনও অব্যাহত আছে।
২) ২০০৬ সালের ৩০ আগষ্ট তৎকালীন সরকার জনগণের সাথে উন্মুক্ত খনি নিষিদ্ধ ও এশিয়া এনার্জির বহিষ্কারসহ যে ৬ দফা চুক্তি করেছেন তা একটি ঐতিহাসিক সামাজিক চুক্তি হিসেবে কার্যকর আছে।
৩) বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুলবাড়ী হত্যাকান্ড ও চুক্তির অব্যবহিত পরে এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রকাশ্য জনসভায় অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন।
৪) বাংলাদেশের সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি এশিয়া এনার্জির ফুলবাড়ী প্রকল্প আইনগত পরিবেশগত এবং জাতীয় স্বার্থের দিক থেকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে রায় দিয়েছেন।
ফলে এরপরও বর্তমান সরকার যদি উন্মুক্ত খনির উদ্যোগ নেয় তাহলে সরকার বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হবে এবং জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের রক্তের সাথে বেঈমানি করবে।
গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে সরকারী তৎপরতা ও যথাযথ পথ
জ্বালানী বিষয়ক সংসদীয় কমিটি বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় একের পর এক বিনা দরপত্রে অত্যধিক ব্যয়বহুল রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের সরকারী কার্যক্রম সর্মথন করেছেন। যুক্তি দেয়া হয়েছে যে, বর্তমান বিদ্যুৎ সংকটে মানুষ বিদ্যুৎ চায়, নিয়ম বা দামের বিষয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। কিন্তু আসলে কি বর্তমান এই দরপত্রবিহীন উচ্চ দামের বিদ্যুৎ প্রকল্প জনগণকে নিশ্চিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে? জনগণের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের জন্য কী আর কোন বিকল্প নেই? জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে আমরা এর আগেও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের কথা বলেছি। কিন্তু সরকার সেদিকে নজর না দিয়ে ব্যয়বহুল জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে পুরো জ্বালানী খাত বিদেশি কোম্পানির কর্তৃত্বে দিয়ে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তাকে ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। নীচের ছকে সরকারি তৎপরতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আমাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরা হল।
বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা নিয়ে সরকারি তৎপরতা এবং আমাদের অবস্থান
.......
Full article:
http://opinion.bdnews24.com/bangla/2010/05/19/উন্মুক্ত-খনি-এবং-গ্যাস-ও-ব/